চিঠি লেখার নিয়ম – সঠিক পদ্ধতিতে একটি চিঠি কিভাবে লিখবেন?
আশা করি আল্লাহুর অশেষ রহমতে আপনারা সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমরাও আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি। চিঠি বা পত্র লেখার নিয়ম এ টু জেড বালায় + pictures এ দেখানো হলো, যাতে বুঝতে বিন্দুমাত্রও সমস্যা না হয়। তাই আপনি যদি চিঠি লেখার নিয়ম সম্পর্কে জানতে / শিখতে চান তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য।
চিঠি লেখার নিয়ম।
চিঠি লিখতে নিচের নিয়ম গুলো অনুসরণ করুন –
ধাপ-১ঃ চিঠি লেখার শুরুতে একদম ডানদিকে প্রেরকের ঠিকানা লিখতে হবে। নোট=[চিঠি লেখার প্রত্যেকটি ধাপ পরপর নিচে লিখতে হয়]
ধাপ-২ঃ প্রেরকের ঠিকানার নিচে এবং বাম দিকে প্রাপকের প্রতি সম্ভাষণ জানিয়ে চিঠির মূল অংশ শুরু করতে হয়।
যেমন (প্রিয় মুশফিক ফারহান ভাই, প্রিয় নায়িকা কেয়া পায়েল, প্রিয় অমুক, প্রিয় তমুক) ইত্যাদি।
ধাপ-৩ঃ প্রাপকের প্রতি সম্ভাষণের পরে প্রাপককে শুভেচ্ছা বা সালাম জানাতে হয়। তারপর একই ধাপে আপনি কি বিষয় নিয়ে প্রাপককে চিঠিটা লিখছেন সেটা উল্লেখ করতে হয়।
ধাপ-৪ঃ এই ধাপে চিঠির বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে হয়। অর্থাত পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা।
ধাপ-৫ঃ এই ধাপে প্রেরক প্রাপকে বিদায় সম্ভাষণ জানাবে এবং কোনো প্রশ্ন থাকলে জিজ্ঞাসা করবে।
এরপর লেখার ডানদিকে নিচে লিখতে হয় “ইতি তোমার -সম্পর্ক অনুসারে বন্ধু/ভাই/বোন/চাচা/খালা/ফুফু ইত্যাদি। এর নিচে প্রেরকের স্বাক্ষর দিতে হয়।
ধাপ-৬ঃ এই ধাপে খাম অংকন করতে হয়। যদি আপনি চিঠি খাতায় লিখেন তাহলে ধাপ-৫ এর নিচে এবং বামদিকে খাম আকবেন।
তবে অবশ্যই খামের বাম দিকে প্রেরক আর ডান দিকে প্রাপক এর (নাম-ঠিকানা) দিতে হবে।
নিচে একটি আদর্শ চিঠি লেখার নিয়ম উপস্থাপন করা হলো।
পত্র/চিঠি লেখার নিয়ম
কোনো ব্যক্তির কাছে মনের ভাব প্রকাশ করে কোনো বিষয় নিয়ে লেখাকেই পত্র লিখন বলে।
পত্র লেখার ক্ষেত্রে যে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে
ক . পত্রের ভাষা হবে সহজ – সরল ।
খ . কঠিন ভাষারীতি পরিত্যাগ করা উচিত ।
গ . বিষয় অনুযায়ী পত্রের প্রচলিত নিয়ম রীতি মানা দরকার ।
ঘ. হাতের লেখা পরিষ্কার ও স্পষ্ট হওয়া উচিত ।
ঙ. যথাস্থানে নাম , ঠিকানা লিখতে হবে ।
যে সব বিষয় পত্রে অন্তর্ভুক্ত থাকবে
ক . পত্র লেখার স্থান ।
খ . পত্র প্রেরণের তারিখ ।
গ . সম্বোধন ।
ঘ . পত্রের বক্তব্য বিষয় ।
ঙ . পত্র লেখকের নাম ও স্বাক্ষর ।
চ . খামের ওপর প্রাপকের নাম ও ঠিকানা ।
How To Writer In Letter In Bangla
পত্রের অংশ :
সাধারণত পত্রের ছয়টি অংশ আছে । যথা—
১।মঙ্গলসূচক বাণী ,
২। পত্র লেখকের ঠিকানা ও তারিখ ,
৩৷ সম্বোধন ,
৪৷ বক্তব্য ,
৫। ইতি বা সমাপ্ত ও
৬। শিরোনাম ।
পত্রের প্রকারভেদ :
পত্র সাধারণত দু’প্রকার । যথা—
১। পারিবারিক ও
২। ব্যবহারিক ।
তবে আরো বিশেষভাবে ভাগ করলে দেখা যায় , পত্রলিখন নিম্নরূপ—
১। ব্যক্তিগত পত্র ,
২। ব্যবসা সংক্রান্ত পত্র ,
৩। নিমন্ত্রণ পত্র ,
৪। আবেদন পত্র ,
৫।অভিনন্দন পত্র ,
৬। দলিল পত্র ও
৭। সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য পত্র ।
ব্যক্তিগতপত্র
একান্ত ব্যক্তিগত কিংবা পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে যে পত্র লেখা হয় তাকে ব্যক্তিগত পত্র বলে । বিষয়বস্তু অনুযায়ী এই পত্রের আকার ছোট বড় হতে পারে ।
ব্যক্তিগতপত্রের নিয়ম
১. পত্রের ডানদিকের শীর্ষে পত্র প্রেরণের স্থান ও তারিখ লিখতে হবে ।
২ . পত্রের বা – দিকে একটু নিচুতে প্রাপকের বয়স ও মর্যাদানুযায়ী সম্বোধনসূচক শব্দ যেমন- মান্যবরেষু , স্নেহাস্পদেষু , প্রীতিভাজনেষু , পাক জনাবেষু , কল্যাণীয়াসু , কিংবা প্রাপকের নাম , যথা- প্রিয় কামাল অথবা শুধু কামাল লেখা যেতে পারে ।
৩ . চিঠির গুরুত্ব এবং বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মূল বক্তব্য লিখতে হবে । এটাই চিঠির গুরুত্বপূর্ণ অংশ ।
৪. চিঠির শেষে পত্র প্রেরকের নাম কিংবা স্বাক্ষর থাকবে । অপরিচিত কিংবা স্বল্প পরিচিত হলে পুরো নাম লেখা বাঞ্ছনীয় । খামের ওপর ডানদিকে প্রাপকের পূর্ণ নাম ও ঠিকানা স্পষ্ট অক্ষরে লিখতে হবে । প্রেরকের নাম ও ঠিকানা থাকবে খামের বাঁ – দিকে।
সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্যে পত্র লেখার নিয়মঃ
এ ধরনের পত্রে সাধারনত দুটি অংশ থাকে।
ক. প্রথম অংশে সম্পাদকের কাছে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে লেখা হয়।
খ. দ্বিতীয় অংশে শিরোনামসহ মূল ঘটনার বিবরণ লেখা হয়।
গ. চিঠি বা পত্রের ভাষা সহজ সরল এবং সংক্ষিপ্ত করে লেখাই উত্তম।
২।আবেদনপত্র বা প্রাতিষ্ঠানিক চিঠি লেখার নিয়ম।
আবেদনপত্র বা দরখাস্ত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারযোগ্য এক ধরনের পত্র। যেহেতু এসব পত্র প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা হয় তাই এর আরেক নাম প্রাতিষ্ঠানিক পত্র।
আবেদনপত্র সম্পূর্ণ অফিসিয়াল কাজে ব্যবহার করা হয়। তাই আবেদন পত্রে ব্যাক্তিগত কোনো কিছু উল্লেখ করা যায় না।
আমি আবারো বলছি আপনারা যদি কোনোদিন আবেদন পত্র লিখেন তাহলে অবশ্যই সেখানে কোনো ব্যাক্তিগত তথ্য তুলে ধরবেন না।
আর অফিসিয়াল কাজে এই পত্রের ব্যবহারের উদাহরণ আমরা নিজেই। আমরা যদি কোনো শিক্ষার্থী, শিক্ষককে কোনো বিষয় সম্পর্কে আবেদন জানাতে চাই তাহলে অবশ্যই আবেদন পত্র লিখতে হয়।
এছাড়া আরো বলতে পারি কোনো অফিসের কর্মচারী তার বসকে যখন কোনো কিছু আবেদন করে তখন তাকে আবেদন পত্র লিকতে হয়। এসকল কাজ অফিসিয়াল বা প্রাতিষ্ঠানিক।
কথা না বাড়িয়ে প্রাতিষ্ঠানিক চিঠি লিখার নিয়ম গুলো বলি।
ধাপ-১ঃ তারিখ (আবেদন পত্র যেদিন লিখবেন)
ধাপ-২ঃ প্রাপক অথবা শিরোনাম(এই ধাপ শুরু করতে হয় “বরাবর” দিয়ে, তারপর প্রাপকের পদবি, প্রতিষ্ঠান, এবং ঠিকানা উল্লেখ করতে হয়।)
ধাপ-৩ঃ বিষয়বস্তু (আবেদন পত্র যে বিষয়ের উপর লিখবেন)
ধাপ-৪ঃ সম্ভাষণ (প্রাপককে জনাব/জনাবা/মহোদয়/মহাত্নন ইত্যাদি দ্বারা সম্ভাষণ করতে হয় এই ধাপে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় জনাব কিংবা জনাবা লিখলে)
ধাপ-৫ঃ আবেদন পত্রের পূর্নাঙ্গ বর্ণনা। (এই ধাপের প্রথম অংশে প্রাপক বা প্রতিষ্ঠানের সাথে আপনার পরিচয় সম্পর্কে উল্লেখ করতে হয়। তবে যথা সম্ভব কম বাক্য ব্যবহার করে।
দ্বিতীয় অংশে আপনি কোন বিষয় নিয়ে প্রাপক কে এই পত্র লিখেছেন তা বাক্যের মাধ্যমে স্পষ্ট করে তুলতে হবে।
মোট কথা যে আপনি প্রাপকের কাছে কোনো কিছু আবেদন করছেন বা চাচ্ছেন তা স্পষ্ট করে তুলতে হবে।)
ধাপ-৬ঃ বিদায় সম্ভাষণ (যেমন ইতি আপনার একান্ত বাধ্যগত ছাত্র -মোঃ লুৎফুজ্জামান শুভ)
আমি দুই ধরনের (আবেদন পত্র বা প্রাতিষ্ঠানিক চিঠি লেখার নিয়ম) এবং উদাহরণ দেখিয়ে দিচ্ছি।
প্রথমটা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য আর পরের টা অন্যান্য অফিসিয়াল কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
পাঠাগার স্থাপনের জন্য আবেদনপত্র লিখ?
৪ জুলাই ২০২১
বরাবর
চেয়ারম্যান
জগতবেড় ইউনিয়ন পরিষদ
পাটগ্রাম উপজেলা
লাল্মনিহাট
বিষয় : পাঠাগার স্থাপনের জন্য আবেদন ।
মহোদয়
আমরা লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার জগতবেড় ইউনিয়ন পরিষদের বাসিন্দা । আমাদের ইউনিয়নের বাসিন্দাদের সাক্ষরতার হার সন্তোষজনক । তাদের অনেকেই বিভিন্ন সরকারি – বেসরকারি চাকুরিসহ নানা পেশায় যুক্ত । বর্তমানে এই ইউনিয়নে যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত অভূতপূর্ব উন্নয়নের কারণে নানা প্রকার সহশিক্ষাক্রম কর্মকাণ্ড এগিয়ে যাচ্ছে । কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় , এই ইউনিয়নে অব্যাহত শিক্ষা গ্রহণের জন্য কোনো পাঠাগার নেই । যেজন্য এই অঞ্চলের জনগণ নিয়মিতভাবে বই পাঠ করার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ।
এই অবস্থায় জগতবেড় ইউনিয়নে একটি পাঠাগার স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি ।
বিনীত
জগতবেড় ইউনিয়নবাসীর পক্ষে
মোঃ লুৎফুজ্জামান শুভ
গ্রামঃবসিরহাট, ডাকঘরঃ জগতবেড়, জেলাঃ লালমনিরহাট।
নিচে আরো একটি আবেদন পত্র চিঠি লেখার নিয়ম নমুনা উপস্থাপন করা হলো